নিজস্ব প্রতিবেদক।। চাঁদা না দেয়ায় ফটিকছড়ির দাঁতমারায় অন্তত ৫ শতাধিক বিভিন্ন ফলজ গাছ কেটে ফেলেছে রাবার বাগান কর্তৃপক্ষ। সোমবার উপজেলার দাঁতমারা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের তারাখোঁ রাবার বাগান এলাকার বদির থলিতে এ ঘটনা ঘটে। এতে পরিবেশের প্রতিবেশের ব্যাপক ক্ষতিসহ অন্তত ৩ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া এসময় রাবার কর্মচারীদের মারধরের শিকার হয়ে আহত হয়েছে নারী পুরুষসহ বেশ কয়েকজন। আহতদের মধ্যে একজন অন্তসত্ত্বা নারীও রয়েছে।
ভাংচুর চালানো হয়েছে কয়েকটি বাড়ী ঘরেও। এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনার পর ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বুধবার সকালে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়ীতে অবস্থান নেয়। পরে বিষয়টি নিয়ে ফটিকছড়ির সাংসদ খাদিজাতুল আনোয়ার সনিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে সুরাহা করার আশ্বাস দিলে দীর্ঘ দুই ঘন্টা পর দুই শতাধিক এলাকাবাসী চেয়ারম্যানের বাড়ী ত্যাগ করেন।
স্থানীয়রা জানান, স্বাধীনতার আগ থেকে কয়েক হাজার পরিবার তারাখোঁ রাবার বাগান এলাকায় পুর্ব নির্ধারিত জায়গায় পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছিল। ১৯৮৩ সালে রাবার বাগান সৃজনের সময় তখনকার বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের কর্তা ব্যক্তিরা এসব বসবাসকারীদের উচ্ছেদ না করে সীমানা নির্ধারণ করে দেন। এর পর থেকে বিগত প্রায় ৫০/৬০ বছর ধরে নিজেরা বসবাসের পাশাপাশি এসব জায়গায় নানা ধরনের ফলজ গাছ লাগায় স্থানীয়রা। সত্তরোর্ধ বয়স্ক জলিল মিস্ত্রি জানান, স্বাধীনতার আগ থেকে এখানে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন তারা। অতীতের কোন কর্মকর্তা তাদেরকে হয়রানি না করলেও বর্তমান ম্যানেজার রবিউল ইসলাম যোগদানের পর থেকে তাদের উপর নেমে আসে নানা ধরনের অত্যাচার নির্যাতন।
তিনি জানান, তাঁর নিয়োজিত এজেন্ট গার্ড আমিন ও ট্রাক্টর ড্রাইভার সিরাজের মাধ্যমে এসব বসবাসকারীদের নিকট মোটা অংকের টাকা দাবী করপন ম্যানেজার রবিউল ইসলাম। টাকা না পেলে শুরু করে কথিত উচ্ছেদ অভিযানের নামে নানা ধরনের অত্যাচার নির্যাতন আর মামলার হয়রানি। ভেঙ্গে দেয়া হয় বসতঘর, কেটে ফেলা হয় নানা প্রজাতির ফলজ ও কৃষি গাছ।
সর্বশেষ গত সোমবার কথিত উচ্ছেদ অভিযানের নামে বদির থলি এলাকায় আবদুচ ছালাম, আবুল,গফুর,সাহাব উদ্দিন ও মতিনের বাড়ীসহ বেশ কয়েকটি বাড়ীতে ভাংচুর চালানো হয়। এসময় কেটে তছনছ করা হয় অর্ধশত বছর পুরনো বিভিন্ন ফলজ গাছ। এ ছাড়া আদা ক্ষেতসহ একাধিক কৃষি ক্ষেতও নস্ট করে দেয়া হয়। এ ঘটনায় আবদুচ সালাম, তাঁর স্ত্রী ও অন্তঃসত্ত্বা পুত্রবধুসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় এ এলাকার হাজারো মানুষের বহু বছরের পুরনো চলাচলের রাস্তা।
আবদুচ সালাম জানান, ম্যানেজার রবিউলের এজেন্ট গার্ড আমিন ও ট্রাক্টর ড্রাইভার সিরাজ এর কয়েকদিন আগে দেলোয়ার ও আইয়ুবের মাধ্যমে এক লাখ টাকা দাবী করেন। টাকা না দিলে তাদেরকে উচ্ছেদ করা হবে বলে হুমকি দেন। পরে আলোচনা সাপেক্ষে আইয়ুব ও দেলয়ারের মাধ্যমে আমিন গার্ড কে ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়। এর দুদিন পর এসে উচ্ছেদ অভিযানের নামে এ ধরনের তান্ডব লীলা চালায় রাবার কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, যেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে তার পাশেই রাবার নির্ধারিত বিপুল পরিমান টিলা ভুমি খালি পড়ে আছে। যেগুলো আমিন ও সিরাজের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে কয়েকজন স্থানীয় লোককে কচুক্ষেত করতে দিয়েছে ম্যানেজার। এছাড়া মতিন, আবুল, শাহাব উদ্দিনের কাছ থেকেও বিভিন্ন অংকের টাকা নিয়েছে গার্ড আমিন ও ট্রাক্টর ড্রাইভার সিরাজ। এর পরও এখন তাদেরকে পুনরায় উচ্ছেদ করার হুমকি দিচ্ছে। অপর দিকে বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে স্থাপিত টিউবওয়েলসহ একটি জায়গা ইউনুচ নামে এক লোকের কাছে বিক্রি করেছে গার্ড আমিন।
স্থানীয়রা জানান, টাকা না দিলে প্রতিনিয়ত উচ্ছেদের নামে এধরণের অত্যাচার চালানো হয় তাদের উপর।
এ ব্যাপারে তারাখোঁ রাবার বাগানের ম্যানেজার রবিউল ইসলাম বলেন, বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই বাগান সম্প্রসারনের জন্য উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। টাকা নেয়ার বিষয়টি সঠিক নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দাঁতমারা ইউপি চেয়ারম্যান মো. জানে আলম বলেন, বিষয়টি অবগত হওয়ার পর এ ব্যাপারে ম্যানেজারের সাথে কথা বলেছেন তিনি। বহু বছরের পুরনো এসব বসতি উচ্ছেদের কোন সুযোগ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় সাংসদ খাদিজাতুল আনোয়ার সনি দেশের বাইরে আছেন। তিনি দেশে ফিরলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সৃষ্ট সমস্যা সমাধান করা হবে।
জিবি/জেএম/ডেস্ক
Leave a comment